20 September 2015

'বাংলিশ' নিয়ে কিছু কথা...

 'বাংলিশ' এই শব্দটির সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। এটা আমাদের দেশের খুবই প্রচলিত একটি ভাষা। তারপরও যদি আপনি না বুঝে থাকেন আমি কোন ভাষার কথা বলছি, তাহলে নিচের লেখাগুলি আপনার জন্য......(বুঝে থাকলেও পড়তে পারেন। আমার কোন সমস্যা নাই)
Banglish
 'বাংলিশ' নামে আসলে কোনো ভাষা নাই। এটি একটি ব্যঙ্গাত্বক শব্দ। বাংলা'র 'বাং' আর ইংলিশ'র 'লিশ' থেকে নিয়ে এই শব্দটি বানানো হয়েছে। বাংলার সাথে ইংলিশ মিলিয়ে বলাকেই ব্যঙ্গাত্বকভাবে 'বাংলিশ' বলা হয়। আমারা প্রায় সবসময়েই এইভাবে কথাবলে থাকি। আমাদের দেশের প্রবীণ ও ভাষাসচেতন ব্যক্তিরা যদিও এর থেকে কিছুটা মুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশের যুবসমাজ নিজের অজান্তে অহরহ এই ভাষা ব্যবহার করে যাচ্ছে।  তবে যদি বলি সবাই নিজের অজান্তে এই ভাষায় কথা বলে, তাহলে ভুল হবে। কারণ অনেকে নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করে থাকে। আসলে তাদের ধারণা যে, ইংরেজিতে কথা বললে বুঝি অনেক স্মার্ট হওয়া যায়! আমি ইংরেজিতে বলবোই(সামনের মানুষটা বুঝুক বা না বুঝুক)!! কিন্তু কথা হলো ইংরেজিতে কথা তো বলতে পারি না! বাংলার সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এইতো শুরু হলো তার ইংরেজি বলা। কি যে সুন্দর করে ইংরেজি বলে! নার্সারি/প্লে-গ্রুপ থেকে এই পর্যন্ত যত ইংরেজি শব্দ শিখেছে সব একবারে নিয়ে আসবে! বাংলা-ইংরেজি দিয়ে নিরামিষ করে কথা বলবে। বাংলার ভাষার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলে। এভাবে কথা বললে যে কোনো উপকার নাই তা না। এর নানাবিধ উপকার রয়েছে। যেমনঃ
  • ছেলেরা খুব কম সময়ে মেয়ে পটাতে সক্ষম।
  • সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেকে তথাকথিত ফেমাস হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
  • সবার সামনে নিজের একটা ইমেজ তৈরি হয়। (আবার যারা বাংলা নিয়ে সচেতন তাদের সামনে এভাবে বললে তারা গাধা ছাড়া আর কিছুই বলবে না)
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা যায়, এটা আধুনিক মেয়েদের (যাদের Facebook/Twitter/Instagram এ নামের আগে/পরে Angel, Princess, Girl, Pori, লাল, নীল, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি উপনাম থাকে) স্বজাতীয় ভাষা। তাদের সাথে দীর্ঘ সময় আড্ডা দিতে হলে  এ ভাষা জানা থাকতে হবে। অন্যথায় আড্ডা জমবে না।
শুধু যুবসমাজ না, আমাদের দেশের মডেল-তারকা-সেলিব্রেটিরাও অতিরিক্ত মাত্রায় এইভাবে কথা বলেন। তাদের কথা বলার ধরন তো ভিন্নরকম। তাদের কথা বলতে দেখলে মনে হয় তারা যেন বাংলাদেশের না, তারা পশ্চিমাবিশ্বের তারকা-সেলিব্রেটি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত না। যদি টিভি-রেডিওর অনুষ্ঠানে অহরহ বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে বলা হয়, তাহলে মানুষ কি বুঝবে, কি দেখবে আর কি শিখবে? আমরা কি কখনও দেখেছি যে, কোনো ইংরেজ কথা বলার সময় ভুলে কোনো বাংলা বলে ফেলেছে? কখনোই না! আর স্প্যানিশ, জাপানিজ, চাইনিজরা তো কখনও নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথাই বলতে চায় না। কিন্তু আমরা এতটুকু ভাবি না যে, তারা আসলে বাংলা ভাষার কত বড় অপমান করছি। ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কত অপমান হচ্ছে এভাবে কথা বলার দ্বারা। যেভাবে আমরা কথা বলি, সেভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের ভাষা বিকৃত হয়ে এমন রূপ নিবে যে, নিজেদের ভাষা বুঝতে অনুবাদকের প্রয়োজন পড়তে পারে।আমাদের এত সুন্দর সাহিত্য সম্ভার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য হয়তো কোনো মানুষই থাকবে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নির্বাক হয়ে যেতে পারে। তাদের কথা কি আমরা একবারও ভেবেছি? আমরা হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবি না, কিন্তু আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম আমাদের কথা ঠিকই ভেবেছেন। আমাদের ভাষার জন্য তারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন। বাঙালি হয়ে আমরা কত ভাগ্যবান একবার ভাবলেই বোঝা যায়।
বাংলার সাথে শুধু ইংরেজি না, আরও অনেক ভাষারই মিশ্রণ হয়। ভিনদেশী সংস্কৃতি আমাদের দেশে ঢুকে পড়ায় এখন অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাই এখন বাংলার সাথে হিন্দি শব্দ ব্যবহার করে। আমার নিজের দেখায় এরকম অনেক আছে। অভিভাবকের অসচেতনতায় আমাদের নতুন প্রজন্মের দ্বারাই আমাদের ভাষার অপসংস্কার হচ্ছে। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিৎ। আমাদের ভাষা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের উপরই। যদি আমরা আমাদের ভাষা সংরক্ষণে ব্যর্থ হই, আমাদের সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ না করি, হয়ত কোনোদিন কোনো নতুন জাতি এসে আমদের এই ভাষা দখল করবে।

 বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। শৈশবে মায়ের মুখ থেকে একটু একটু করে শেখা এই ভাষা। আমাদের এই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা দরকার। ইংরেজিতে কথা বলা কোনো অপরাধ না, তবে বাংলা বলার সময় তার সাথে ইংরেজির মিশ্রণ খুবই বড় অপরাধ।

অনেক বলে ফেলেছি, আর না। সূর্য্যি মামা উঁকি মেরেছেন অনেকক্ষণ আগেই। আমি খুবই ঢিলা আর অলস। কিন্তু আবার কোনো কাজে মন বসে গেলে শেষ না করে উঠি না। আমার লেখা ভালো লাগলে জানাবেন। আর যদি গায়ে লাগে তাহলে যে মনে মনে গালি দিবেন তা আমি জানি :) । তবে গালিটা বাংলিশে না দিয়ে যদি বাংলায় দেন তাহলেই আমার লেখাটা স্বার্থক :D ।

No comments: